সড়কে হত্যা এখন বাংলাদেশের প্রধানা
সমস্যা বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে(বিএইচআইএস) শিরোনামে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়,তাতে
দেখা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার
১৬৬ জন নিহত হন৷ আর তাতে প্রতিদিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন৷কিন্তু প্রসাসনের কর্তা
বেক্তি ও নীতি নির্ধারকদের এই বিষয়ে কন মাথা বেথা নাই।সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে একটি
স্লোগান আমাদের নিকট খুবই পরিচিত, তা হচ্ছে-“নিরাপদ
সড়ক চাই”। কিন্তু নিরাপদ সড়ক তথা সড়কের নিরাপত্তা
দিয়ে আমাদের কি লাভ? সড়কের নিরাপত্তা নয়, আমরা
নিজেদের নিরাপত্তা চাই। দুর্ঘটনা থেকে মুক্তিসহ রাস্তা চলাচলের পূর্ণ নিরাপত্তা
চাই।
রাজধানীর জোয়ার সাহার এলাকায় প্রায় ১৭
বছর ধরে বসবাস করছি আমি আহসান উল্লাহ টুটুল,
আমার হীরের টুকরো দুই সন্তান নিয়ে আমার
সুখের সংসার, ঐশ্বর্য নেই, অঢেল ধন সম্পদ নেই, বড়
বড় অট্টালিকা নেই, কিন্তু আমার সংসারে ছিল, শান্তির
বেহেশত, সুখ আর শান্তিতে ভরা, আমার
পরিবার, প্রতিরাতেই আমার দুই সন্তানের সাথে ডাইনিং
টেবিলে বসে অনেক আলাপই হত, দুই সন্তানই আমার কাছে বন্ধুর মত, সর্বশেষ
১০ই ফেব্রুয়ারী তে রাতে ডাইনিং টেবিলে বসে আদরের ছোট্ট সন্তান আদনান তাসিনের সাথে
শেষ কথা, বিশেষত উত্তরায় শিশু ফাইযার মৃত্যু তাকে নাড়া
দেয় এবং সাম্প্রতিক সড়কে খুন হত্যা তাকে বিশেষ ভাবে নাড়া দেয়, সে
আমাকে বলে আব্বু, সড়কের নৈরাজ্য, হত্যা খুন এইসব নিয়ে ফেইসবুকে লেখতে
পারনা, আমি সেইদিনই ফেইসবুকে "সড়কে হত্যা
থামাও" পেইজ বানিয়ে, সড়কে হত্যার মিছিল ঠেকাতে গণজাগরণ
সৃষ্টির লক্ষে কাজ সুরু করি,
অনন্য দিনের মত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সকালে ফজরের নামাজের আযানের সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে ফযরের নামাজ পড়ে, কোরআন
তেলওয়াত , কলেজের উদ্দেশে যাত্রা করে, কিভাবে
সেই অবুঝ শিশু বুঝবে এই যাওয়া শেষ যাওয়া, আমার সন্তান আদনান তাসিন সেন্ট জোসেফ
কলেজ থেকে ফেরার পথে ঘাতক বাস তাকে জেব্রা ক্রসিঙ্গের উপর ঢাকা বমান বন্দর সড়ক
শেওড়া বাস স্ট্যান্ড ( আদনান চত্বর) দ্রুতগামি ভ্রামনবারিয়ার উত্তরা পরিবহন তাকে
চাপা দিয়ে চলে যায়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম প্রচার করে, রাস্তা
পারা পারে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হন, আদনান তাসিন ত জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার
পার হচ্ছিল , জেব্রা ক্রসিং আছে কিন্তু সামনে পিছে স্পীড
ব্রেকার নাই, কোন ত্রাফিক পুলিশ নাই, কোন
সিগন্যাল নাই, আর কোন বিকল্প না রেখে এত বেস্ত রাস্তায়
ফুটওভার ব্রিজ কেন ব্রিজটি সরাল ?, এলাকায় এত মানুষ , স্কুল
কলেজ –
ডি ও এইচ এস বারিধ্রায় হাজার হাজার
অফিস, কেউ প্রতিবাদ করলনা, তাই
আজো জাস্তিস পেলাম না, আর পাবও না
পথচারীতাকে কুর্মিটোলায় নিল তারা তার
চিকিৎসা করলোনা - বললো ঢাকা মেডিক্যালে নিতে হবে - এখানে দুর্ঘটনার রুগীর চিকিৎসা
করেন না , আমার সন্তানের বাঁচার জন্য তীব্র যন্ত্রনায়
চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে - শিশুর চিৎকার কারো হৃদয়ে সামান্যতম নাড়া
দেয়নি , প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে আমারা সন্তান আসতে দেরি
দেখে আমারা ফোন করি, তখন তার এক সহপাঠী আমাদেরকে জানায়, তারা
হাসপাতালে আদনানের হাঁটু ও কনুই ছিলে গেছে বাস থেকে নামতে গিয়ে, ইত্যাদি
প্রায় দেড় ঘণ্টা আমার নিষ্পাপ সন্তান যুদ্ধ করে, পরে কুর্মিটোলা থেকে গলা ধাক্কা খেয়ে
বিনা চিকিৎসায়, এম্বুলাঞ্চে নিয়ে,ঢাকা
মেডিকেলের উদ্দেশে যাত্রা করে আমার আরেক- শিশু সন্তান -দীর্ঘ পথের জন্য তাকে অন্তত
অক্সিজেন তো দিতে পারতো -বনানীতে দীর্ঘ জ্যাম,
গাড়ির দীর্ঘ লাইন, আর
কত যন্ত্রনা সইতে পারে এক শিশু ! -
সর্বদাই হাসি খুশি থাকা টগবগে আমার শিশুটি চির তরে স্তব্দ হয়ে যায় - হটাৎ করে
পৃথিবীর সকল বাতাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় তার শোকে !
ঐদিকে
মা তার জন্য ভাত প্লেটে দিয়ে অপেক্ষা করছে আদরের সন্তান এসে ভাত খাবে, মা
কিভাবে জানে তার সন্তান বেওয়ারিশ হয়ে রাস্তায় মুখু থুবড়ে পড়ে আছে আর বাঁচতে চাই, বাঁচতে
চাই বলে চিৎকার করছে,পানি পানি বলে চিৎকার করছে !পানি পানি
বলে চিৎকার করছে !!
কোনো মিডিয়া তার মৃত্যুর খবর প্রচার
হয়নি , কারণ, তাদের কলেজ বা সেই কলেজের শিক্ষার্থীরা
সবাই চুপ- যেন কোথাও কিছু হয়নি, তার মর্মান্তিক মৃত্যু তাদের মনে
মনসামান্নতম দাগও কাটেনি , তারা নুন্নতম কোনোসহানুভুতি দেখাইনি, কোন
শিক্ষার্থী ফোনও করেনি, কোন অভিভাবক কোনোসহানুভুতি দেখাইনি, কোন
ফোনও করেনি, তারা কেউ প্রতিবাদ করেনি - বরং পর দিন কলেজ
বন্ধ রাখে যাতে বিষয়টি নিয়ে বেশি জানা জানি না হয় - এবং পরদিন কলেজ কর্তৃপক্ষ
বা শিক্ষার্থীরা গুজব ছড়িয়ে দেয় - ঘাতক ড্রাইভার হেলপার ধরা পড়েছে - যাতে করে
বাহিরের কোনো কলেজের শিক্ষার্থী আমার সন্তানের মর্মান্তিক হত্যার বিচারে রাস্তায়
না নামে , হয়তো কলেজ চেয়েছিল , নিজেরা
প্রতিবাদ করবে না অন্যরা যেন না করে,
আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে সেন্ট জোসেফ
কলেজে যাই প্রিন্সিপ্যালের সাথে কথা বলতে, কিন্তু দেখা পেলাম না, পরে
টেলিফোন তাকে সবিনয়ে অনুরধ করি, থানায় একটু ফোন করে আসামিকে ধরার জন্য
বলতে , তিনি সরাসরি আমার আনুরধ প্রত্যাখ্যান করেন, অথচ
আমার সন্তান যখন খুন হয় তখনো সে বুকে ঝুলিয়ে রেখেছিল সেই কলেজের আইডিকার্ড, শরীরে
জড়িয়ে ছিল কলেজ ইউনিফরম, আর সে বারিধারা স্কলারস এ ১৩ বছর অধায়ন
করেছে তার প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে দেখা করে তাকে অনুরধ করি, থানায়
একটু ফোন করে আসামিকে ধরার জন্য বলতে , তিনি সরাসরি আমার আনুরধ প্রত্যাখ্যান
করেন, অথচ এই ১৩ বছরে এই প্রতিষ্ঠানে তার অনেক সাফল্য
, মেডেল ,
ট্রফি , সার্টিফিকেট
আমার দোয়া আশা আমার অভাগা নিষ্পাপ
সন্তান ভালো আছে নিশ্চয় ওপারে- সে ভারি মিষ্টি ভারি আদরের, নিষ্পাপ, পবিত্র
! তাকে নিয়ে এভাবে লিখব, বা তাকে এইভাবে হারাতে হবে ভাবিনি, শূয়র-
হায়না শকুন ঘাতকেরা এইভাবে নিষ্পাপ শিশুকে
তাদের চাকায় পীচের রাস্তায় পিষে বর্বর নির্মম ভাবে খুন করবে , সবই
যেন স্বপ্ন, হয়ত আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে আমি আবার আমার
নিষ্পাপ সেই পবিত্র মিষ্টি মুখটি দেখব। কেন জানি প্রতিক্ষণ প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, ইস
সে যদি আমার সামনে এসে আমাকে আব্বু বলে বুকে জড়িয়ে ধরে, বুকের
ভিতরের তীব্র যন্ত্রণার ঢেউ হয়ত একটু শান্ত হত,
সড়কে ঘাতকের হাতে প্রান হারিয়ে আমার মত
কত মা-বাবা আদরের সন্তান হারিয়ে চোখে মুখে কান্নার রোল, আমার
কান্নায় যেন শরীরের সকল রক্ত অশ্রু হয়ে বের হয়ে আসতে চায়, কারন
কষ্টে চোখের সকল জল আগেই শুকিয়ে গেছে । তবুও স্বান্তনার জন্যই বেদনা ভুলে থাকার
জন্য, কষ্ট গুলোকে চেপে রেখে বিভিন্ন জায়গায় লিখি, কেউ
আমার ফরিয়াদ শুনে না, মানুষের এত্ত সময় কৈ এইসব লেখা পড়ার , মানুষের
এত্ত সময় কথায় অন্নের কষ্টে সমবেথি হবার,
কি অপরাধ করেছিল আমার নিষ্পাপ সন্তান? যার
মিষ্টি পবিত্র আদরের মুখ দেখলে মিষ্টি হাসিতে মনের সকল কষ্ট বিলিন হয়ে যায়, আমি
আমার হীরের টুকরো দুই সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলাম,
প্রতি রাতে শুতে গিয়ে আমি
শোকর-আলহামদিলিল্লাহ বলে শুতে যেতাম, আমার স্ত্রী, আমার
দুই সন্তান আমার গর্ব , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গর্ব , এলাকার
গর্ব,
আমার দুই সন্তান আমার ভালোবাসা , আমার
কাছে আল্লাহর রহমত, আল্লাহার অশেষ মেহেরবানীতে আমার দুই সন্তান মেধাবী ও ইনডোর আউটডোর
খেলাধুলা, কালচারাল প্রোগ্রাম, সায়েঞ্চ
ফেয়ার সব দিক থেকে সম ভাবেপারদর্শী, আমার
সন্তান শুধু আমার নয় দেশেরও গরব, আমার জ্যেষ্ঠ ছেলে আদনান সামিন
বারিধারা স্কলার্স থেকে পিএসসি ও জেএসসি তে জিপিএ-৫ পায়, ২০১৭
সালে ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে, নটারডেম
কলেজে ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স ২য় বর্ষের ছাত্র এবং কনিষ্ঠ ছেলে আদনান তাসিন,বারিধারা
স্কলার্স থেকে পিএসসি ও জেএসসি তে জিপিএ-৫ পায়,
২০১৮ সালে ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স থেকে
জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে, সেন্ট যোসেফ এ একদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
আমার দুই সন্তানের জন্য কখনো প্রাইভেট
টিচার এর প্রয়োজন হয়নি, তার মা’ই ছিল তাদের আদর্শ, তাদের
টিচার, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকেই বলতো একই দুই
ভাই মেধাবী, তারা নিয়ম মাফিক লেখাপড়া , কোরআন
তেলওয়াত, নামাজ পড়তো,
তাদের দুই ভাই ছিল পরম বন্ধুর মত, তারা
সব বিষয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করতো, সদা উৎফুল্ল – হাসি
খুশি থাকতো দুই ভাই, কোন বিষয়ে তাদের কোনদিন কোন আবদার অভিযোগ
ছিলনা, সব টাতে সন্তোষ থাকতো দুই ভাই,
২০১৭ সালে হটাত করে আমি জিবিএস ভাইরাসে
আক্রান্ত হয়ে সম্পুরন শরীর পারালাসেস হয়ে যায়,
আমি শয্যাশায়ী, ডাক্তার
, ঔষধ , ফিজিও, তার পরও মনোবল ভাঙ্গে নি, দুই সন্তানের কাঁধে ভর দিয়ে দাড়াঁতে
শিখেছি, দুই সন্তানের উপর ভর করে হাটঁতে শিখছি, দুই
সন্তানের উপর ভর দিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখছিলাম, বাবার হাত ধরে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য অনেক
সন্তানের হয় – কিন্তু সন্তানের হাত ধরে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য আমার
হয়েছে, কিন্তু হায়না শকুন ঘাতক আমার আদরের নিস্পাপ
ছোট্টো সন্তানকে নির্মম ভাবে খুন করে, যে সন্তান মানুষকে বাঁচতে শেখায়- সে
নিজেই পৃথিবীতে থাকতে পারলো না
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি
ধিক্কার
এখানে
No comments:
Post a Comment